আজ ১১ই মে ঐতিহাসিক কুরআন দিবস। এ দিনটিকে জানতে হলে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে নিকট অতীতে। এ দিনটি মুমিনের হৃদয়ে চির ভাম্বর একটি দিন। ঈমানী চেতনা শানিত করার একটি দিন। কুরআনের দু'টো আয়াতে (সূরা বাকারাঃ ১৯১ ও সূরা তওবা: ২৯) এর ভুল ব্যাখ্যা করে উগ্র দুজন হিন্দুর দায়ের করা মামলা ১৯৮৫ সালের ১০ এপ্রিল কোলকাতার হাইকোর্ট আমলে নেয় এবং বিচারপতি পদ্ম দাস্তগীর রিট গ্রহন করে তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেবিট দাখিলের জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ প্রদান করেন। এ গর্হিত ঘটনায় সারা বিশ্বের ন্যায় পরদিন ১১ এপ্রিল ঢাকার বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে তৌহিদি জনতার পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের পেটুয়াবাহিনী এরশাদ সরকার সমাবেশে ইসলাম প্রিয় জনতাকে বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয় ও আঘাত করতঃ নির্মমভাবে আহত করে। অনেককে গ্রেফতারও করে। তারপর কুরআন প্রেমী জনগন সরকারের পক্ষ থেকে আসা সব বাধা উপেক্ষা করে মাসব্যাপী লাগাতার কর্মসূচীর ঘোষণা করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১১ই মে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আয়োজন করা হয় প্রতিবাদ সমাবেশের। বিনা উস্কানীতে তৎকালীন কুখ্যাত ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লার নির্দেশে ১৫ মিনিট ধরে গুলি চালানো হয় জনতার উপর। এতে ৮ জন নিহত হন। এর মধ্যে ছিলেন রিক্সাওয়ালা, রেলশ্রমিক,দিন মজুর ও স্কুল ছাত্র ২ জন শিবির কর্মী। এটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে যাওয়া নির্মম এক হত্যাকান্ড। আহত হন আরো শতাধিক মুসলিম জনতা। এমনকি শহীদ ও আহতদের ঘটনা যেন জানাজানি ও পত্রিকায় সংবাদ না হয়, সেজন্য পরদিন সংবাদ প্রকাশে সরকারের পক্ষ থেকে সেন্সরশীপ আরোপ করা হয়।

বিশ্ব মুসলিমের কড়া প্রতিবাদের মুখে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মামলাটি খারিজের জন্য এটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিলে ১৩ মে কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বি, সি বসাকের আদালতে স্থানান্তরিত হয় এবং তিনি মামলাটি খারিজ করে দেন। তারপর থেকেই তৌহিদী জনতার বিপ্লব হিসেবে ইসলামী ছাত্র শিবির ১১ মে-কে ঐতিহাসিক 'কুরআন দিবস' হিসেবে পালন করে আসছে।

ফলাফল:

★কুরআনের নিরংকুশ মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে সেদিন শরীক হয়ে ছিলেন দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।

★তারা প্রমান করেছে কুরআনকে ভালবেসে আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য তারা জীবন দিতে কুণ্ঠিত হয়না।

★তারা কুরআনের প্রকৃত অর্থ ও কুরআনের হক্ক কি সেটাও বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

★তারা আরো বুঝাতে সক্ষম হয়েছে-দ্বীন কায়েমের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দেশে কুরআনী আইন বলবৎ করা সক্ষম।

★ইসলামবিদ্বেষী চক্র চেয়েছিল কুরআনকে বাজেয়াপ্ত করতে, অথচ ১৪ শ' বছর পর্যন্ত চেষ্টা করেও আজ পর্যন্ত কেউ এ স্পর্ধা দেখাতে পারেনি।

মহান রবই কুরআনের একমাত্র হিফাজতকারী, আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তায়ালা ইরশাদ করেছেন-

"উহারা কি দাবী করে যে, কুরআন আপনার বানানো? তোমরা যদি তোমাদের দাবীতে সত্যবাদী হও, তাহলে ১টি সূরা অন্ততঃ তৈরী করে নিয়ে আসো, আর এ ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত যাদের প্রয়োজন বোধ করো, সাধ্যমত ডেকে আনো। "
(সূরা ইউসুফ-৩৮)

অথচ এই ঘটনার ৪০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কুখ্যাত মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের বিচার আজো হয়নি।শহীদদের রক্তে হোলি খেলে যারা আত্মতুষ্টি লাভ করেছিল, তাদের বিচার যদি দুনিয়ার আদালতে নাও হয়, তাদের বিচার আল্লাহর আদালতে হবেই হবে। এ ভেবে শহীদ পারিবারের সন্তানেরা আজো শান্তনা খুঁজে ফিরে।
মহান রব পবিত্র কুরআনের মর্যাদা রক্ষায় 'কুরআন দিবস'কে মুমিনের হৃদয়পটে আমৃত্যু ধারণ করার তওফিক দিন।

গুলশান আরা
১১/০৫/২০২৫